Tuesday, April 28, 2015

হবিগঞ্জে নতুন প্রাণ পেয়েছেন হাজারো নারী শ্রমিক

আশা’ একজন মধ্য বয়সী নারী। লেখাপড়া বেশি করতে পারেননি। এসএসসি পাশ করেছেন। বিয়ে হবার পর চলে এলেন স্বামীর সংসারে। এখন তার দুটি সন্তান। স্বামী ছোবান মিয়া গাড়ী চালক। তার সংসারে অভাব পিছু হটছিল না। স্বামীর একার রোজগারে সংসার চালানো আশার পক্ষে কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। কি করবেন, খুঁজে পাচ্ছিলেন না কাজও। এমন একটি অবস্থায় উপায় বের করে দেয় হবিগঞ্জ সদর উপজেলার অলিপুরে প্রতিষ্ঠিত ‘হবিগঞ্জ ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক’।

২০১৪ সালের ৭ এপ্রিল এ পার্কটি উদ্বোধন করেন অর্থমন্ত্রী আবু মাল আব্দুল মুহিত। এখানে উৎপাদন শুরু হলে ‘আশা’ চাকরি নেন। স্বামী ও তার বেতনের উপার্জিত অর্থে এখন ভালই চলছে সংসার। শুধু ‘আশা’ নয় হাজারো নারী শ্রমিক এখানে কর্মরত হয়ে নতুন প্রাণ পেয়েছেন। তারা নিজ পায়ে দাঁড়াতে পারছেন।

প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ এখানে অসহায় নারীদের উপার্জনের দ্বার খুলে দিয়েছে। এখানে কর্মসংস্থানের সুযোগ পেয়ে বাড়িতে আর বসে থাকছেন না এ অঞ্চলের নারীরা। নিজের মেধা আর শ্রম দিয়ে কাজ করে সৎপথে অর্থ রোজগার করছেন। নারী শ্রমিকদের কাজ শেষে আবার নিজ গৃহে ফেরার জন্য এ কোম্পানির নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থা চালু রয়েছে। আবার আবাসিক ব্যবস্থাও রয়েছে। এসব ছাড়াও কর্মস্থলে মাত্র দুই টাকায় খাবার গ্রহণ করা যাচ্ছে।

এ অঞ্চলের প্রাকৃতিক গ্যাস ও যোগাযোগের সহজ লভ্যতাকে কাজে লাগিয়ে মাত্র এক বছরেই ৬০০ বিঘার উপর স্থাপিত এই পার্কে কর্মসংস্থান হয়েছে প্রায় সাড়ে ১০ হাজার লোকের। যার অর্ধেকের বেশি নারী। এখানে নতুন করে আরো কয়েক হাজার লোকের কর্মসংস্থান হবে।

বাংলাদেশে ১১টি ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক রয়েছে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের। এরমধ্যে হবিগঞ্জ ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে অন্যান্য পণ্যের পাশাপাশি উৎপাদন করা হচ্ছে ‘দুরন্ত’ নামে বাইসাইকেল। এই সাইকেল শুধু হবিগঞ্জেই উৎপাদন করা হচ্ছে। আর ‘দুরন্ত’ দিয়ে বিশ্ব জয়ের স্বপ্ন দেখছেন প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ।

প্রায় ৭ মাস পূর্বে উৎপাদনে যাওয়া ‘দুরন্ত’ বাইসাইকেল দেশের বাজারে ইতোমধ্যে পরিচিতি পেয়েছে। এরই মধ্যে আমেরিকা থেকে একটি প্রতিষ্ঠান বাইসাইকেল ক্রয়ের জন্য চুক্তি করেছে। অচিরেই আমেরিকার পাশাপাশি ইউরোপ আর মালয়েশিয়ার বাজারে যাবে দুরন্ত। হবিগঞ্জ ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে এখন প্রতিদিন উৎপাদন হচ্ছে এক হাজার পিস সাইকেল।

উদ্বোধনের পর ৭ এপ্রিল হবিগঞ্জ ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের ১ বছর অতিবাহিত হয়েছে। পার্ক এর জেনারেল ম্যানেজার হাসান মোঃ মঞ্জুরুল হক বলেন, ‘প্রাণ-আরএফএল এর পণ্য বিক্রির প্রসার বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমেরিকার টং দোকানেও প্রাণের পণ্য পাওয়া যাচ্ছে। বর্তমানে বিশ্বের ১০৮টি দেশে প্রাণের পণ্য রপ্তানী হচ্ছে। দেশে ৬৮ হাজার লোকের কর্মসংস্থানের পাশাপাশি ও ৭৮ হাজার কৃষকের সাথে পণ্য সরবরাহের চুক্তি রয়েছে।’

তিনি আরও জানান, খাদ্য এবং প্লাস্টিক পণ্যের বাইরে নতুন কিছু পণ্য উৎপাদনের লক্ষ্যে হবিগঞ্জে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক স্থাপন করা হয়েছে। দিন দিন উৎপাদন বাড়ছে। প্রাণ এর প্রোডাকশন লাইনে যেসব পণ্য উৎপাদন করার পরিকল্পনা রয়েছে সেগুলো হল, বিস্কুট, বেকারী, লিকুইড গ্লুকোজ, বেভারেজ, কনফেকশনারি ও ফ্লেক্সিবল প্যাকেজিং। এছাড়া ইলেক্ট্রিক ক্যাবল, ইলেক্ট্রনিক্স পণ্য, মেলামাইন পণ্য, বাইসাইকেল, মেডিকেল যন্ত্রপাতি, পিভিসি, মল্টেড প্লাস্টিক, টেক্সটাইল ও টয়লেট্রিজ সামগ্রীও রয়েছে।

তিনি জানান, প্রাণ-আরএফএল গ্রুপকে বিশ্বব্যাংক, আইএমএফসহ বিদেশি ব্যাংক ঋণ দিয়ে থাকে। পাশাপাশি মিতসুবিসি, ওয়ালমার্টসহ বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ব্র্যান্ডের সঙ্গে মিলে বিভিন্ন পণ্য উৎপাদন করে। ফলে এখানে পণ্যের মান ও পরিবেশ বান্ধব কারখানা গড়ে উঠেছে। হবিগঞ্জ ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে একটি ইটিপি চালু আছে এবং আরও তিনটি নির্মাণাধীন। এখানে নিয়োজিত শ্রমিকের ৮০ শতাংই স্থানীয়।

No comments:

Post a Comment